অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড.ইউনূসের প্রতি
মির্জা আব্বাসের সাবধান বাণী
Tnntv24.নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মন্তব্য করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ‘আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ডানে-বাঁয়ে এমন আরও সরকারি কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য রয়েছেন, যাঁরা তাঁকে সঠিক পথে চলতে দেবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তাঁদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
বুধবার ( ২৩ এপ্রিল ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র ফোরাম।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ড. ইউনূসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, কয়েকদিন আগে যে লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, সুফিউর না কী নাম, এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে–বাঁয়ে আছে। দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। এরা পাঁচজন (কয়েকজন সচিব) এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন, আপনি নোবেল লরিয়েট…এরা শেষ করে দেবে।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবেন। ড. ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বরে না হোক, জুনে হবে। এ কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন…আপনি ডিসেম্বরে বলার পরপরই অন্য আরেকজন বলে দিল জুনে। পরে আপনি এটাকে এনডোরস (অনুমোদন করা) করলেন। এ বিষয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে নির্বাচনটা যেন না হয়।’
বিদেশে কিছু সরকারি সাংবাদিক আছে, ওদের সরকারে না নিয়ে এই গভর্নমেন্ট ভুল করে ফেলছে আর কী-মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘উচিত ছিল, তাঁদের সরকারে নেওয়া। তাঁরা আবার খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমার বক্তব্যগুলো কাটপিস করে এমনভাবে জনগণের সামনে হাজির করা হয়, যাতে জনগণ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। এ জন্য এখন বক্তব্য দিতে খুব হিসাব করে দিতে হয়।’
‘আমি বিশ্বাস করছি না, আশা করছি। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ দেখি না। কয়েকটা দল যা শুরু করেছে, এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো হইতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমন হবে? কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন, নির্বাচনে যাব না। কয়েকদিন আগে হইলেন, নির্বাচনে গেলেই কী আর না গেলেই কী’, বলেন মির্জা আব্বাস।
নির্বাচন আর সংস্কার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ একটা অবস্থা এসেছে, দেশের নির্বাচন না সংস্কার। নির্বাচন না সংস্কার যদি আলাপ করি, অনেক লম্বা আলাপ হবে। ছোট একটা কথা কি জানেন? নির্বাচনের বিকল্প শুধু নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কিছু হতে পারে না। এখন আমি বুঝি না, আমি কথা বললেই বলবে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে। সংস্কার চায় না। আরে ভাই না। আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকু প্রয়োজন আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই।’
‘আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচনও চাই’ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কোন সংস্কার চাই? যেটা দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় সংস্কার যেটা আরও বিপদ ডেকে আনবে, এমন সংস্কার আমাদের প্রয়োজন নাই।’
বিদেশে কিছু সরকারি সাংবাদিক আছে, ওদের সরকারে না নিয়ে এই গভর্নমেন্ট ভুল করে ফেলছে আর কী—মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘উচিত ছিল, তাঁদের সরকারে নেওয়া। তাঁরা আবার খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমার বক্তব্যগুলো কাটপিস করে এমনভাবে জনগণের সামনে হাজির করা হয়, যাতে জনগণ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। এ জন্য এখন বক্তব্য দিতে খুব হিসাব করে দিতে হয়।’
‘আজকে যখন এখানে বসেছি, কথা বলছি, দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমরা ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছি। এই ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৫ হাজার কর্মী নিহত হয়েছেন, ৫ হাজারের বেশি কর্মী গুম-খুন হয়েছেন, আমাদের জেল খাটতে হয়েছে বছরের পর বছর, মাসের পর মাস’, বলেন মির্জা আব্বাস।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিন্তু আমি একবার বলেছিলাম, আপনারা যে সংস্কার চাচ্ছেন, সব সংস্কার তো মানা যাবে না। এই কথা টুইস্ট করে আমাদের কয়েকজন বিদেশে অবস্থানরত তথাকথিত সাংবাদিক টুইস্ট করে এমনভাবে বললেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না। এমনকি, সালমান রহমানের টাকা খেয়ে যাঁর স্বাস্থ্য চেহারা মোটা হয়েছে, এমন লোকটা প্রায়ই আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আসেন। উনি প্রায়ই বলেন, ‘‘কেন মানবেন না? আপনাদের কী স্টেক আছে, কেন মির্জা আব্বাস এটা মানবেন না?’’ তোমার যেমন বিদেশে পালায় থেকে কথা বলার অধিকার আছে, আমার কি দেশে থেকে কথা বলার অধিকার নাই? আপনারা তো পালায় গিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলতেছেন, কোনোদিন দেশে আসবেন না।’