Tnntv24.নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, ‘নির্বাচন ভালো হলেই মানুষ গুড গবর্মেন্ট পায় না। গত ১৫ বছরে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এটা কল্পনা করা যায়না। এটা দিয়ে ৬৫ টি পদ্মা সেতু তৈরী করা যায়। কতটা বর্বর হলে একজন মানুষের ৩৬০টি বাড়ি থাকতে পারে লন্ডনে। বেনজিরের বোধহয় প্রতি জেলায় একটি করে বাড়ি রয়েছে। একজন পিওনের যদি ৪০০ কোটি টাকা থাকে তাহলে মালিকের কত টাকা?
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। এদিন সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করুন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার করতে হবে, এবং এর সমালোচনাও করতে হবে। শেখ হাসিনার সময়ে প্রশ্ন তোলা যেত না। আমরা দেখেছি শিক্ষক, সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা, চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা দিতে হবে। দোষ হাসিনার না, দোষ খালেদার না। যেই সংবিধান আর রাষ্ট্র কাঠামো বানিয়েছি, তার স্ট্রাকচারটাই হচ্ছে স্বৈরাচারে পরিনত করা। তাই ক্ষমতাকে কিভাবে চেক এন্ড ব্যালেন্স করা যায় তা ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে তার কাজের জন্য সংসদে জবাবদিহিতা করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি ভোটের নামে শেখ হাসিনা কিভাবে প্রহসন করেছে। এই পার্লামেন্টে কোন জবাবদিহিতা নাই। এমপি পাপ্পুর স্ত্রী বললো সে বাসায় একা থাকে, তাই পাপ্পু ৬ কোটি টাকা ব্যয় করে তাকেও এমপি বানালো ৬ এমপির সমর্থন নিয়ে। সেই পাপ্পু এখন কুয়েতের কারাগারে আছে। আদালতের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। এটা যে চলছে না তার প্রমাণ হচ্ছে দুজন বিচারককে কান ধরে বের করে দেয়া হয়েছে। তাই এদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। থাকলে ত্বকীর বাবা বিচার পেত। এমন মানুষকেই আমরা বিচারপতি বানাই যাদের আবার বের করেও দেয়া যায়।
সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘নাগরিক সমাজের মধ্যে পার্টিবাদ কায়েম করা হয়েছে। এদেরও দলদাস বানানো হয়েছে। আওয়ামী ভাঙ্গারি লীগ আছে, জাতীয়তাবাদী সাপুড়ে দল আছে। বিয়ের সময় জিজ্ঞাস করে পাত্র কি করে? উত্তর আসে পাত্র ছাত্রলীগ করে। এভাবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, পিয়ন, সেক্রেটারী দলদাসে পরিনত হয়েছে। আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতা দেখিনাই। স্তাবকতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো আমাদের সম্পাদকেরা। সাংবাদিকতার বইয়ের প্রথম লাইন হচ্ছে ‘পৃথিবীর প্রত্যেকটা সরকার মিথ্যা বলে, প্রত্যেকটা সরকার তথ্য লুকাতে চায়। সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সত্য তুলে এনে প্রকাশ করে দেয়া।
তিনি জনগনের রাষ্ট্র তৈরীর আহবাজ জানিয়ে বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে একটা মাফিয়া তৈরী হয়েছে। শামীম ওসমান এটা কন্ট্রোল করতো। পুরো দেশেই এমন ছোট ছোট মাফিয়া তৈরী হয়েছিলো। সব মানুষের দেশ বাংলাদেশ হয়নি। হয়েছে লুটেরা ভুমিদস্যু, পাচারকারী, সালমান রহমান, বসুন্ধরা, শামীম ওসমান, বেনজীর, মতিউরের রাষ্ট্র হয়েছে। আমার আপনার রাষ্ট্র হয়নি। জনগনের রাষ্ট্র তৈরী করতে হবে।
সভায় জেলা সুজনের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলের সভাপতিত্বে ও আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন,সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন, সিপিবির সাধারন সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, গণসংহতির মহানগর সমন্বয়ক নিয়ামুর রশিদ বিপ্লব, গণঅধিকারের জেলা সেক্রেটারি রাহুল আরফিন অন্যরা।