রাজধানীর উত্তর মুগদায় এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক কলেজ শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত পিয়াস ইকবাল নুর (২৩) রাজধানীর কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনা তার বন্ধু শামীম (২৪) গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে নিহতের পরিবারের করা মামলায় অভিযুক্ত অর্ণবকে গ্রেফতার করেছে মুগদা থানা পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের বরাতে পুলিশ বলছে, মোবাইল বিক্রির সাড়ে ৪ হাজার পাওনা টাকা চাইতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতের পরিচিত অর্ণবের কাছ থেকে মাহির মোবাইল কিনেছিল। অর্ণব এই টাকা চাইতে পিয়াসের বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু টাকা না পেয়ে ফিরে আসে। বাসায় টাকা নিতে কেন গেল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১০টার দিকে উত্তর মুগদা লিটল এঞ্জেল গলিতে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় শামীম ও পিয়সকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার দিকে মারা যান পিয়াস। নিহত পিয়াস রাজধানীর কবি নজরুল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসপাতালে পিয়াসের প্রতিবেশী ফখরুল আলম জানান, পিয়াসের বাবার নাম ইকবাল হোসেন। তারে বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। বর্তমানে উত্তর মুগদায় থাকেন। রাত ১০টার দিকে তারই পরিচিত এবং কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বাসার অদূরে লিটল এঞ্জেল গলিতে তাকে ও তার বন্ধু শামীমকে রক্তাক্ত অবস্থয় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিয়াস মারা যান। শামীম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, পিয়াসের মরদেহটি মর্গে রাখা হয়েছে। আর শামীম জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। মোবাইল কেনাবেচা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনাটি মুগদা থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
ডিএমপির মুগদা থানার ওসি তারিকুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত পিয়াস ইকবালের বাবা ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত অর্ণবকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম পেয়েছি তাদেরকে গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, নিহত পিয়াস, অর্ণব, মাহির ও শামীমসহ আরও কয়েকজন নিজেরে মধ্যে পরিচিত, বন্ধু। তাদের বন্ধু মাহির অর্ণবের কাছ থেকে একটি মোবাইল কিনেছিলেন। অর্ণব এই পাওনা টাকা চাইতে পিয়াসের বাসায় গিয়েছিল কিন্তু টাকা না পেয়ে ফিরে আসে। মাহির বাসায় টাকা নিতে কেন গেল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারে মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঘটনার দিন নিহত পিয়াসকে ডেকে নেয়া হয়। পিয়াস ও শামীমের সাথে অর্ণবসহ অন্যদের মারামারি হয়। পরে এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন পিয়াসের মৃত্যু হয়।
এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে নিহত পিয়াসের বন্ধু মাহির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী পরিচয়ে দিয়ে একজন কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার শাশুড়ীর ফোন দরকার ছিলো এজন্য ওনি (মাহির) তার বন্ধুর কাছে থেকে ফোন কিনেছিলো। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা ছিলো তবে ওনি ঘটনার সময় ওখানে ছিলেন না। এখানে অনেক কাহিনী আছে, সেটা এখন বলতে পারছি না।
নিহত পিয়াসের বাবা ইকবাল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, তার পরিচিত বন্ধুরা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাসা থেকে ডেকে নেন। তার কিছু সময় পরই লিটল অ্যাঞ্জেল গলিতে পিয়াস ও শামীমকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। কোনো কিছু নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে বন্ধুরাই হত্যা করেছেন। আমি এ ঘটনায় মুগদা থানায় মামলা করেছি।