বিকেএমইএ’র সভাপতি হাতেম
ফ্যাসিবাদের দোসর না,তিনি বিএনপি করেন
Tnntv24.নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিকেএমইএ’র সভাপতি ফ্যাসিবাদের দোসর না। তিনি বিএনপি করেন। তাঁকে ওসমান পরিবারের দোসর বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। এমনটাই দাবি করলেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন,আমি ওসমান পরিবারের লোক কিনা ঢাকায় এমন প্রশ্ন করেছেন এক সাংবাদিক। আমি বললাম, আমরা আসলে কেউ কারো পরিবারের লোক না। আমি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলে ছিলাম না।
বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায় ‘মিট দ্য প্রেসে’ তিনি এ ব্যাখ্যা দেন। একইসাথে বিগত সময়ে নিট ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন বিকেএমইএ’তে বিগত সময়ে তার অবদান ও তার রাজনৈতিক অবস্থানেরও ব্যাখ্যা দেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে ‘ওসমান পরিবারের দোসর’ অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “গত সরকারের আমলে গোয়েন্দা সংস্থার থেকে শুরু করে অনেকেই আমাকে সরাসরি বলেছেন, (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী আপনাদের মতো কিছু ক্লিন ইমেজের লোক চাচ্ছেন। যদি আপনি সম্মত হন তাহলে আপনার ফাইলটা আমরা প্রস্তুত করবো। কিন্তু আমি কখনই রাজি হই নাই। আমি কখনও কারো লোক ছিলাম না। পোশাক শিল্পই আমার পরিবার।”
বিকেএমইএ’র প্রতিষ্ঠা তার হাতে হয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, “বিষয়টা তো এমন না যে, সেলিম ওসমান আমাকে আইনা বিকেএমইএতে ঢুকাইছে। তাহলে আমি হয়তো সেলিম ওসমানের লোক হইতাম। বরং বিকেএমইএ’র জন্মটাই আমার হাতে। বিকেএমইএ’র প্রথম মেম্বারশিপ আমার প্রতিষ্ঠানের নামে।”
এই সময় তার পাশে বসা বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মনসুর আহমেদকে দেখিয়ে বলেন, “উনি সেলিম ওসমানের বন্ধু। কিন্তু ’৯৬ সালে বিকেএমইএতে আইনা তারে কিন্তু প্রথম কমিটিতে আমি ঢুকাইছি। প্রথম কমিটির এই দুইজন এখনো আমরা কমিটিতে আছি।”
হাতেম বলেন, “সেলিম ভাই নিজেই পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যতদিন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবে আর আমি জীবিত থাকবো ততদিন হাতেম তুমি প্রেসিডেন্ট হইতে পারবা না। মিডিয়ার সামনে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং যারা আমাকে ওসমান পরিবারের বা স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের দোসর বানাবার চেষ্টা করে, তাদের এই দিকটা মনে রাখা উচিত।”
আগামী ১০ মে বিকেএমইএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে ৩৫ জনের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে মাত্র ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন।
সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে তিনি তাদের প্যানেলের ইশতেহার তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আগামীতেও নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বানাবার উদ্যোগ অনেকেই নিয়েছে। সবাই আল্লার রহমতে ফেল করেছেন। কারণ আমি তো কারো দোসর ছিলাম না।”
বিগত সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সরকার যখন যেই থাকুক না কেন আমাদের তো সরকারের সাথে থাকতে হয়। যেহেতু তারা পলিসি মেকিং এ থাকেন তাই তাদের সাথে থেকেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পলিসিগুলো বের করে আনতে হয়। সরকারের বিরোধীতা করে তো এইটা করা যাবে না। ব্যক্তিস্বার্থে কোনো সরকারের সাথে ছিলাম না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ব্যবসায়ীদের সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ সমালোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে মোহাম্মদ হাতেমের দেওয়া একটি বক্তব্যের ‘কাট অংশ’ প্রচার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
ওই বৈঠক প্রসঙ্গে হাতেম বলেন, “একুশে জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকলেন। আগেরদিন সালমান এফ রহমান সাহেব আমাকে ফোন করে আসতে হবে বলে জানালেন। আমরাও গেলাম। ওইখানে দেওয়া বক্তব্যের একটি অংশ কাট করে প্রচার করার চেষ্টা করে। পুরো বক্তব্যটা কিন্তু আনে না। পুরো বক্তব্য আনলে শোনা যাবে, সালমান রহমান সাহেব যখন আমাকে ডাকেন তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলছিলেন, ‘হাতেম যদিও বিএনপি করে কিন্তু সে আমাদের কথা শোনে’। এই কথাটা উনি যে বলেছিলেন সেই রেকর্ডও কিন্তু আছে।”
যদিও তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কোন দল করি না, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা ইসলামিক কোনো দল করি না। কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি ধর্মীয় দৃষ্টিকোনকে প্রাধান্য দিয়ে চলি। আমি আলেম পরিবারের একজন সন্তান।”
গত বছরের আগস্টে ৪৮ জন তরুণ উদ্যোক্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। ওই সময় বিবৃতিদাতাদের মধ্যে তার ছেলেও ছিলেন বলে জানান হাতেম।
তিনি বলেন, “আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন, আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলার চেষ্টা করেন, আর তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হওয়ার চেষ্টা করেন, সেদিন কিন্তু তাদের কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু আমার ছেলেই না, এই ৪৮ জন তরুণ উদ্যোক্তা কিন্তু আমার সাথে সম্পৃক্ত।”
“যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তারা হয়তো আমার সম্পর্কে জানেন না অথবা কোনো উদ্দেশ্য বা পারপাস নিয়ে তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন”, যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৫ আগস্ট ‘সকল বোর্ড মেম্বারদের সম্মতিক্রমে’ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি নির্বাচিত হন বলেও জানান তিনি।
তবে সেলিম ওসমানের পদত্যাগের পর চিঠিতে পরবর্তী সভাপতি হাতেমকে করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের প্রেসিডেন্ট লিখিতভাবে বলেছেন, আমাকে যেন প্রেসিডেন্ট করা হয়। বিগত দিনে এই সেক্টরে আমার অবদান দেখে আমাকে প্রেসিডেন্ট করতে অনুরোধ করেছেন। এইটা ওনার বদান্যতা, উনি ওনার দায়িত্বটুকু পালন করেছেন। উনি যদি সেদিন পরিষ্কারভাবে নিষেধও করে দিতেন, তাহলেও আমি প্রেসিডেন্ট হতাম। কারণ আমি ছাড়া বিকেএমইএতে আর কেউ আছে কিনা সেইটা আপনারাই বলেন।”
তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন তো আমরা ওপেন করে দিয়েছিলাম। যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তারা তো নির্বাচনে আসেন নাই। তাদের মধ্যে একজন তো বিকেএমইএ’র মেম্বারশিপ নবায়নও করে নাই এবং ভোটারই হয় নাই। এমনকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও তারা পাঠিয়েছেন।”
এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, “বিকেএমইএ’র এই পর্যায়ে আসার পেছনে কার কী ভূমিকা ছিল সেইটা তো ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাদের পাশে আগেও যেমন ছিলাম তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবো।”