সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপি এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে তারা একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। বিবিসি বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি তারা জোট সরকার গঠন করে, তাহলে সেটি ইমরান খানের সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই দলটির বেশিরভাগ প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ইমরান খানের দল পিটিআই এবং নওয়াজ শরিফের দল পিএমএলএন উভয়ই বলছে, তারা পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠন করতে চায়।
এখন সরকার গঠন করার জন্য একটি দলকে দেখাতে হবে যে, তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন রয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৩৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬টি আসনের জনপ্রতিনিধি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এর বাইরে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যার মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের এবং ১০টি অমুসলিমদের। বস্তুত জাতীয় পরিষদে কোন দলের আসন সংখ্যা কত, সেটির ওপর নির্ভর করেই সংরক্ষিত এসব আসন বণ্টন করা হয়ে থাকে। তবে পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসন বণ্টনে ভূমিকা রাখতে পারেন না। এ অবস্থায় পিটিআই-সহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এবারের নির্বাচনে ভোট কারচুপি করা হয়েছে।
রোববার বিক্ষোভকারী রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনের দিকে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। তারা যেন কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন ভবনের দিকে যেতে না পারে, সে জন্য ভবনে ঢোকার রাস্তায় কাঁটাতার এবং বড় ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে রেখেছিল পুলিশ। ফলে বিক্ষোভকারীদের কেউই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ভবন ঢুকতে পারেনি। তবে কয়েকশ বিক্ষোভকারী আশপাশের রাস্তায় জড়ো হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার ধরে স্লোগান দিতে থাকে। এ অবস্থায় কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছিল যে, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এটি মূলত একটি ঔপনিবেশিক যুগের আইন, যেটি জারি করার পর চারজনের বেশি লোকে একসঙ্গে হতে পারে না। এই নিষেধাজ্ঞাটি নির্বাচনের আগে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জারি রাখা হয়েছিল।
‘জাল ভোট’ নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান দলটির সমর্থকদের নির্বাচন কমিশন অফিসের বাইরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পিটিআই দাবি করেছে যে কমপক্ষে ১৮টি আসনের ফলাফলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট কারচুপি করেছেন।
শনিবার সেনা সমর্থনে থাকা পিএমএল-এন এর নওয়াজ শরিফ জোট সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য অন্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে পিপিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। ক্ষমতার ভাগাভাগি প্রশ্নে সোমবার তাদের আলাপ অর্থপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করেছে। বিবিসি বলছে, এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল’ হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ডা. ফারজানা শেখ বিবিসিকে বলেছেন, ইমরানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরকার গঠনের অনুমতি দেওয়া প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, মি. শরিফ এবং পিপিপির মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে যেকোনো জোটই হবে ‘দুর্বল এবং অস্থিতিশীল জোট’। এরই মধ্যে পিটিআই সমর্থিত অন্তত ছয় জন প্রার্থী, যারা এবারের নির্বাচনে জিততে পারেনি, তারা নিজেদের আসনের ফল পরিবর্তনের জন্য আদালতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাদেরই একজন ইয়াসমিন রশিদ, যিনি লাহোরে নওয়াজের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা একটি নির্দিষ্ট ফর্মে নির্বাচনি ভোট কারচুপির অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা কোনো রকমের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন।