নারায়ণগঞ্জ শুক্রবার | ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বসন্তকাল | ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষ
জাকির খাঁন মুক্ত হলে শহরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি পরিবর্তন হবে,এমন প্রশ্ন অনেকের।Nafiz Ashraf.Tnntv24
জমির ধরণ ও পরিমাণ ভেদে ঘুষ,বিতর্কিত পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলেরএসিল্যান্ডের বদলি।Nafiz Ashraf.Tnntv24
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে।Nafiz Ashraf.Tnntv24
আজ ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে শুরু হচ্ছে।Nafiz Ashraf.Tnntv24
এমন নারায়ণগঞ্জ গড়ব সন্তানরা যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।Nafiz Ashraf.Tnntv24
দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিকেএমইএ নির্বাচনের আলো ফোটাতে যাচ্ছে ।Nafiz Ashraf.Tnntv24
রূপগঞ্জের কামসাইর ইমান ভূঁইয়া ক্রিয়েটিভ স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা:Nafiz Ashraf.Tnntv24
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি শাহ আলম-সম্পাদক ওবায়দুর রহমান:Nafiz Ashraf.Tnntv24
বিএনপি নির্বাচনি রোডম্যাপ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।Nafiz Ashraf.Tnntv24
বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো দুর্দান্ত সব আইডিয়া আছে-প্রধান উপদেষ্টা।Nafiz Ashraf.Tnntv24
Next
Prev

ভালোবাসা যখন পুণ্যের কারণ

ভালোবাসা যখন পুণ্যের কারণ

Facebook
WhatsApp
LinkedIn
ভালোবাসা যখন পুণ্যের কারণ
ভালোবাসা পৃথিবীর সব প্রাণীর সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টজীবে ভালোবাসা না থাকলে এ পৃথিবী অচল হয়ে যেত। পরস্পরের মধ্যে প্রীতি স্থাপনের জন্য আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। ভালোবাসার কারণেই মা গর্ভে সন্তান ধারণ করেন। পিতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ভালোবাসার কারণেই বনের হিংস্র প্রাণীগুলোও স্বজাতিদের নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে। তাই ভালোবাসা একটি পবিত্র জিনিস। এটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দান এবং তাঁর রহমত লাভের উপায়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) তাঁর নাতি হাসানকে চুমু খেলেন। সেখানে আকরা ইবনে হাবিস নামের এক সাহাবি বসা ছিলেন। হাসানকে চুমু খাওয়া দেখে তিনি বললেন, আমার ১০টি সন্তান রয়েছে। আমি তাদের কাউকে চুমু খাইনি। নবীজি (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হবে না।’ (বুখারি : ৫৬৫১)
দুনিয়ার সব কাজকর্মেরই দুটি ধারা আছে। একটি খোদায়ি ধারা। আরেকটি শয়তানি ধারা। ভালোবাসারও দুই পথ। শয়তানি এবং খোদায়ি। মুসলমানরা ভালোবাসা চর্চা করে খোদায়ি পথে। কারণ মুসলমানদের আদর্শ হলো আল্লাহ ও রাসুলের পথ। অমুসলিমরা ভালোবাসে শয়তানি পথে। শয়তানি পথে ভালোবাসার চর্চা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ ও ধ্বংসের কারণ। আর ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হতে আল্লাহ তায়ালা বারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবং স্বহস্তে নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম করো, নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, অন্য অনেক বিষয়ের মতো মুসলমানরা ভালোবাসার এ পবিত্র কাজেও অমুসলিম তথা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক ছেলেমেয়ের ওপর পর্দার বিধান রক্ষা করা ফরজ। ইসলাম বিয়েপূর্ব নারী-পুরুষের কোনো সম্পর্ককেই বৈধতা প্রদান করে না। চাই তা যেভাবেই হোক না কেন। দেখা-সাক্ষাৎ, চিঠিপত্র আদান-প্রদান, পারস্পরিক কথাবার্তা-এসবই নাজায়েজ ও মারাত্মক গুনাহ। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে অনেক বক্তব্য বর্ণিত আছে। অথচ আজকের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মুসলিম তরুণ তরুণীদের দ্বারা এই নিষিদ্ধ কাজগুলোই হচ্ছে। যদিও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণই ভালোবাসার একমাত্র নিদর্শন নয়, তবুও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মূল আয়োজনটি এখানেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যুবক-যুবতীর বিয়েপূর্ব অনৈতিক, অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনই হলো আসল ভালোবাসা। যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইসলামে বিপরীত লিঙ্গের বৈধ ভালোবাসা হলো স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা হচ্ছে পবিত্র ও কাক্সিক্ষত। ইসলাম এই ভালোবাসার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাঁদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাঁদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন। হাদিস শরিফে আছে, রাসুল (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আয়েশাকে নিয়ে তিনি আবিসিনীয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (রিয়াদুস সালিহিন : ১/১৯৭)
বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হলো সুখ-শান্তি, ভালোবাসা ও দয়া। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো স্বামী স্ত্রীর দিকে দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তা হলে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টি নিয়ে তাকান।’ এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, তাদের প্রতি রহম করা ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক স্ত্রীই তার স্বামীর কাছে ভালোবাসা চায়। স্বামীদের উচিত, স্ত্রীদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।
ইসলামে অবৈধ ও হারাম ভালোবাসার জন্য যেমন দুনিয়া-আখেরাতে শাস্তি ও গ্লানি রয়েছে, তেমনি বৈধ ভালোবাসার জন্য দুনিয়া-আখেরাতে সুখ-শান্তি ও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার সন্তুষ্টির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টি কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালোবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়’ (মুসনাদে আহমদ : ২২০৮৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয়, আর শহিদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহিদগণ তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, তারা হচ্ছে সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, তখন তারা ভীত হবে না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। (তিরমিজি : হাদিস ২৩৯০)
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এমন তিনটি বস্তু রয়েছে, যে ব্যক্তির মধ্যে সেগুলো বিদ্যমান থাকবে, কেবল সে-ই এগুলোর কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। তা হলো-১. যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা সবকিছু হতে অধিক পরিমাণে রয়েছে। ২. যে ব্যক্তি কোনো বান্দাকে শুধু আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশে ভালোবাসে এবং ৩. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কুফর হতে মুক্তি দেওয়ার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে অনুরূপভাবে অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (বুখারি : হাদিস ১৬)
তাই আসুন, আমরা বৈধ ভালোবাসার চর্চা করি। সব ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ ও রাসুলকে রাখি। বৈধ ও প্রকৃত ভালোবাসা কখনো দিবসে সীমাবদ্ধ হয় না। ভালোবাসার আবেগ, অনুভূতি সবসময় বহমান। ভালোবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবি কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না, তখন সে ভালোবাসার মাধ্যমে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

এ সম্পর্কিত আরো খবর...

error: Content is protected !!