পৃথিবীতে মানুষের জীবন ধারণের প্রধান অবলম্বন রিজিক। প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের ব্যবস্থা করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের কাছে রিজিক আসতে পারে; কিন্তু সেই ‘মাধ্যম’ রিজিকের মালিক নয়। যেমন-দোকান বা দোকানের কর্তা, অফিস বা অফিসের বস, ক্ষেত বা ক্ষেতের মহাজন আল্লাহপ্রদত্ত রিজিক লাভের মাধ্যম; মালিক নয়। একজন মানুষ এক বছরে কত টাকা আয় করবে, কোন খাবার কতটুকু খাবে, সব কিছুই এক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কারও রিজিক কমানো-বাড়ানো সবই তার এখতিয়ার। মানুষের রিজিক মানুষ কমাতে পারে না।
যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন, ততটুকুই কেবল মানুষ ভোগ করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অসংখ্য জায়গায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, কেবল তিনিই রিজিকের মালিক-‘আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিজিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা আনকাবুত : ৬২)
হঠাৎ করে চাকরি চলে যেতে পারে, ব্যবসায় ক্ষতি হতে পারে, কিছুদিন পর আবার ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি হতে পারে, চাকরিতে হতে পারে পদোন্নতি-এই উন্নতি-অবনতিও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তার নির্দেশেই এমনটা হয়। আর এটাও মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার রিজিক প্রশস্ত করেন অথবা তা সীমিত করেন? এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য!’ (সরা রুম : ৩৭)
প্রকৃতিতে কিছু প্রাণী আছে যারা খাদ্য মজুদ করে না। প্রতিদিনই খাবার সংগ্রহ করে খায়। এসব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্বও আল্লাহর, তিনি এদের না খাইয়ে রাখেন না। এ প্রসঙ্গে সুরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, এমন কত জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মজুদ রাখে না; আল্লাহই রিজিক দান করেন তাদের ও তোমাদের এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (সুরা আনকাবুত : ৬০)। আল্লাহ যদি কারও রিজিক বন্ধ করে দেন, তবে তা চালু করার শক্তি কারও নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এমন কে আছে যে তোমাদের রিজিক দান করবে, যদি তিনি রিজিক বন্ধ করে দেন? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে’ (সুরা মুলক : ২১)। আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করলে প্রতিদান আছে। প্রতিদান দেবেন আল্লাহপাক। ‘বলো, আমার প্রতিপালক তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিজিক বর্ধিত করেন অথবা ওটা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা : ৩৬)
পাখির কথাই ধরা যাক। তার খাবার মজুদের গুদাম নেই। সকালে ক্ষুধা পেটে বের হয়। বিকাল বেলা কিন্তু ভরা পেটেই ঘরে ফিরে। হাদিস শরিফে এসেছে, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর সঠিক ও যথাযথভাবে ভরসা করো, তা হলে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয়ে পেট ভরে বাসায় ফিরবে’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)। আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করে না তাদের ওপরে পাখিগুলোর প্রতি যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদের স্থির রাখেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা মুলক : ১৯)
মানুষ মানুষের কাছে টাকা-পয়সার প্রত্যাশা করা, বেতন-বোনাস বৃদ্ধির প্রার্থনা করা অনুচিত। মানুষ ক্ষমতাবানই হোক, তার কাছে মাথা নত করা যাবে না। সৎ থেকে কাজ করতে হবে। ভরসা করতে হবে আল্লাহর ওপর। মনে-প্রাণে বিশ্বাস থাকা দরকার। রিজিক আল্লাহই বাড়িয়ে দেবেন। অন্যদিকে কাজ না করে হাত গুটিয়ে থাকলেও হবে না। রিজিক তো আর এমননি এমনি বৃদ্ধি পেতে পারে না। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার সন্ধান না করে বসে বসে এ কথা না বলে, হে আল্লাহ আমাকে রিজিক দাও, কারণ তোমরা জান আকাশ কখনো স্বর্ণ বর্ষণ করে না। বস ততটুকুই বেতন বৃদ্ধি করতে পারবেন, যতটুকুু আপনার জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। তাই মানুষের অতিরিক্ত চাটুকারিতা করা অনুচিত। সুরা নুহের ১০ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা। (সুরা নুহ : ১০-১২)
আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিজিক; যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই, আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা (সুরা তালাক : ৩)। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন’ (আবু দাউদ)। তাই দুনিয়ায় সে যত বড়ই হোক না কেন। তার কাছে নয় বরং রিজিক আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। বিশ্বাস যেন এমন হয়, রিজিক বৃদ্ধির ক্ষমতা কেবল আল্লাহর। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সৎ ও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।