রূপগঞ্জে গাইড বই না কেনায় শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিলো শিক্ষক
Tnntv24.স্টাফ রিপোর্টার রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়-মিঠাবো স্কুলে গাইড বই না কেনায় ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুরা বিশ্বাসকে পিটিয়ে বাম হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষার্থী গত ১৫ দিন যাবত স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছে। শিক্ষার্থী তুরা বিশ্বাস উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মাছুমাবাদ দিঘিরপাড় এলাকার নেপাল বিশ্বাস এর মেয়ে।
শিক্ষার্থী তুরা বিশ্বাসের পরিবার সূত্রে জানা গেছে ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী তুরা বিশ্বাস গাইড বই নিয়ে স্কুলে না আসায় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়-মিঠাবো স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাফায়েতুর রহমান তাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে হাতের আঙ্গুলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা করে । এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় ১০/১২ দিন পর ওই শিক্ষার্থীর হাতের আঙ্গুলে অবস্থা আরো অবনতি হয়। তখন শিক্ষার্থী তুরা বিশ্বাসের অভিভাবক গুরুতর অবস্থায় তাকে স্কুলে নিয়ে আসলে এ ঘটনাটি স্কুলসহ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে স্কুলের শিক্ষকদের সমন্বয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় তার হাতের আঙ্গুলটির হাড় ফেটে গেছে।
এখনো তার হাতের আঙ্গুলের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। সে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরো সময় লাগবে বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারি আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়- মিঠাব এর প্রধান শিক্ষিকা মলি আক্তার মিলিকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়- মিঠাব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মইনুল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এ স্কুলে তিনি প্রত্যেক শিক্ষককে বেত দিয়ে পাঠদান করতে বাধ্য করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে হয়রানি, প্রভাব বিস্তার, খারাপ আচরন ও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মইনুল হক যোগদান করার পরপরই বাইরের বখাটে ছেলেরা স্কুলের ভিতরে এসে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আসছে। এ ব্যাপারে তিনি কোনো রকম আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও এ স্কুলে অনেক অনিয় হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এ স্কুলের প্রভাব বিস্তার,খারাপ আচরন ও অনিয়মসহ শিক্ষার্থীদের বেত মারা বন্ধ হোক।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষক সাফায়েতুর রহমান তার আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী তুরা বিশ্বাসকে গাইড বইয়ের জন্য বেত মারা হয়নি। তুরা বিশ্বাস ও তার সহপাঠিদেরকে ক্লাসে পড়া না পারায় তাদেরকে শ্বাসন করা হয়েছে।
তবে তার হাতের আঙ্গুল ভাঙ্গার বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তুরা বিশ্বাসের মা তুরাকে ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর হাতের আঙ্গুল ফুলা অবস্থায় স্কুলে নিয়ে আসলে আমি ও স্কুলের আরো একজন শিক্ষক তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জানতে পারি একটি আঙ্গুলে একটু ফাঁটা দিয়েছে। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়- মিঠাবো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মইনুল হক বলেন তুরা বিশ্বাসকে গাইড বইয়ের জন্য মারা হয়নি। গাইড বই দিয়ে স্কুলে পাঠদান নিষেধ। তুরা বিশ্বাসের চিকিৎসা স্কুল কর্তৃপক্ষ বহন করছে। অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাইড বই দিয়ে পাঠদান এবং ক্লাসে বেত নিয়ে যাওয়া সম্পুর্ণ নিষেধ। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আদর ভালোবাসা দিয়ে পাঠদান করাবে। আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়- মিঠাবো স্কুলের ঘটনাটি তদন্ত করে অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।