নাফিজ আশরাফ:
প্রতি ঈদের মত এবারও বাঙালি ললনাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় জামদানি শাড়ি। আর সেই চাহিদা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছোট বড় শপিংমলের শাড়ির দোকান গুলো নতুন নতুন কালেকশন মজুদ করেছে। এবং ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরো ভ্যারাইটিস কালেকশনের জন্য রমজান মাসের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে জামদানি তাঁত মালিকদের স্মরণাপন্ন হচ্ছে। সে কারণে জামদানি কারিগর এবং তাঁতিরা এখন অতি ব্যস্থ সময় পার করছে।
নারায়ণচঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তাঁরাব পৌরসভায় নোয়াপাড়া এলাকায় বাংলাদেশের একমাত্র জামদানি পল্লী। সেখানে তাঁত বোর্ডের একটি অফিসও রয়েছে। অফিসের কর্মকর্তারা তদারকি করে থাকে জামদানি উৎপাদনের মান ও বাজারজাতের বিষয়াদি। এই বোর্ড থেকে অসচ্ছল তাঁতিদের জন্য আর্থিক সহায়তা(লোন)দেয়ার নিয়মও রয়েছে। নোয়াপাড়ায় শতাধিক তাঁতির(মালিক)পাঁচ শতাধিক তাঁত রয়েছে। প্রতি তাঁতে এক বা একাধিক তাঁত শ্রমিক জামদানি শাড়ি বুননের কাজ করছে। রমজান মাস তাদের প্রধান মৌসুম। তাই অধিক রোজগারের আশায় দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তারা। রোজগারের বাড়তি টাকা দিয়ে সেই সকল শ্রমিকরা তাদের সংসারের ঈদের খরচ যোগাবে এমন প্রত্যাশায় বুকে সাহস যোগাচ্ছে। আর যারা জামদানি তাঁতের মালিক তাদের ব্যবসাও এখন জমজমাট।
রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রায় আড়াই শ’ জামদানির তাঁত রয়েছে। সোনারগাঁও ফাউন্ডেশনে(যেটি সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবে পরিচিত)প্রদর্শনির জন্য এবং বানিজ্যিক ভাবে কয়েকটি জামদানি তৈরির তাঁত রয়েছে। এছাড়া সাদিপুরসহ কয়েকটি গ্রাম বা এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছ।
সাধারণত জামদানির কথা আসলেই শাড়ির কথা মাথায় আসে। কিন্তু শাড়ির পাশাপাশি পাঞ্জাবি এবং থ্রি পিসের জন্যও জামদানি তৈরি হচ্ছে। এসব কাপড় সামর্থবানরাই বেশি ব্যবহার করে থাকে বলে দাবি করলেন নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীর তাঁতি আবুল কাশেম। রাধানীর ডেমরায় বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনা ঘেঁষে প্রতি সপ্তাহে একদিন ভোরে জামদানির হাঁট বসে। সেই হাঁটেও নারী পুরুষ প্রচুর ক্রেতার সমাগম ঘটে থাকে। এ হাঁটে সবচে ব্যতিক্রম যে দৃশ্য দেখা যায়,তা হলো;বিক্রেতারা জামদানি হাতে নিয়ে ক্রেতাদের কাছে যায়। পাইকার ক্রেতারা বিছানা পেতে এক জায়গায় বসে থাকে আর যারা জামদানি বিক্রেতা তারা তাদের পসরা নিয়ে সেই কেতার মুখোমুখী হয়। দর কষাকষি করে বেচা কেনা করতে দেখা যায়।
জামদানি শাড়ি, থ্রি পিস ও পাঞ্জাবির কাপড়ের মূল্য নির্ধারণ হয় সুতার মান ও নকশা বা ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। দুই হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত জামদানি শাড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। জামদানি শুধু বাংলাদেশেই নয়। ভারত, আমেরিকা, লন্ডনসহ যেখাই বাঙালি ললনারা বসবাস করছে, সেখানেই পৌছে যাচ্ছে জামদানি।