ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই প্রতিদিন নিয়মিত নামাজ পড়েন। আশা রাখেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের। কিন্তু নামাজে মনোযোগ থাকছে কতটুকু, কী তেলাওয়াত করছেন, রুকু-সেজদা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেসব সম্পর্কে খুব কমই খেয়াল রাখা হয়। নামাজ তো কেবল ওঠাবসার নাম নয়, নামাজে আত্মার সংযোগ থাকতে হয়। নামাজকে বলা হয় মুমিনের মিরাজ। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কথোপকথন হয়। সে জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা। আর নামাজে একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়াতে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া চাই।
মানসিক প্রস্তুতি : ক. সারা দিনের কর্মপরিকল্পনা নামাজকে কেন্দ্র করে তৈরি করা। অর্থাৎ দিনের কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে নামাজকে না ঢুকিয়ে আগে থেকেই প্ল্যান করে নেওয়া, যেন নামাজের সময়সূচিকে ঘিরে কাজকর্ম করা যায়। খ. নামাজের সময়সূচি মেনে চলা। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়ে নেওয়া। সামান্য কারণে নামাজ পড়তে দেরি না করা। গ. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৩)। এর দ্বারা জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। ঘ. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে সব অবসাদ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলা। ঙ. নামাজে কোন কোন সুরা পড়ব, তা নামাজে দাঁড়ানোর আগেই ঠিক করে নেওয়া।
শারীরিক প্রস্তুতি : ক. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া প্রভৃতি জৈবিক কাজ সেরে নেওয়া। খ. পরিচ্ছন্ন অবস্থায় নামাজ আদায় করা। সে জন্য সঠিকভাবে ওজু বা গোসল সম্পন্ন করা চাই। গ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় শান্ত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করা। মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কিছু সামনে না রাখা।
নামাজ অবস্থায় করণীয় : ক. নামাজে তাড়াহুড়া না করা। আমি বিশ্বজগতের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হচ্ছি, এটা মনে রেখে ধীরস্থিরভাবে নামাজ সম্পন্ন করা। খ. নামাজের প্রতিটি ধাপ যেমন, রুকু, সেজদা সঠিকভাবে আদায় করা। গ. নামাজে নিজের মস্তক অবনত রাখা এবং দৃষ্টিকে সেজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখা। ঘ. নামাজে কী আয়াত পড়ছি, তা অনুধাবন করার চেষ্টা করা। কারণ আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে তা মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সে জন্য কিছু বহুল পঠিত সুরা এবং দোয়ার বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে নেওয়া। নামাজে মনোসংযোগের জন্য এটি অনেক গুরুত্ব রাখে। ঙ. নামাজ পড়ার সময় মাথায় এ চিন্তাও রাখা যে, হয়তো এ নামাজই আমার জীবনের শেষ নামাজ। অতএব জীবনের শেষ নামাজ কি মনোযোগের সঙ্গে পড়ব না? চ. নামাজের মধ্যে মনোযোগ ছুটে যেতে চাইলে কল্পনা করা যে, আমি পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। নিচে জাহান্নামের ভয়ানক আগুন, সামনে জান্নাত আর ওপরে মহান আল্লাহ আমাকে দেখছেন। এ অবস্থায় কি মনোযোগ ছুটে যাওয়া সম্ভব? সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনে করতে হবে আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গেই কথা বলছি, তবেই নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা আসবে।