Tnntv24.শফিকুল আলম ভুইয়া রূপগঞ্জঃ
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সিমান্তবর্তী ত্রিমোহনী ও রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া-নগরপাড়া এলাকার বালু নদীর উপর সেতুর নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ২১ বছরেও শেষ হয়নি। বহু প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত বালু ব্রিজ নামে পরিচিত এ সেতু ২০০৩সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন ৭৫ দশমিক ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু কোন সুফল হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালু নদীর সেতুর দু’টি পিলার, দু’টি পিলারের কলাম, ক্যাপ, একপাশে উইংওয়াল ও এবার্টমেন্ট দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর সংযোগ সড়কের বেহাল দশা। ওই সড়কের সলিং করা ইট উঠে গেছে। ব্যবহৃত রড মরিচায় ধরেছে।
বালু নদীতে সেতু নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতো। খুলে যেতো সম্ভাবনার দুয়ার। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সেতুবন্ধন তৈরি হতো। কমে যেতো রাজধানী ঢাকার যানজট আর দুরত্ব। একটি মাত্র সেতুর জন্য রূপগঞ্জসহ আশপাশের লাখো মানুষকে ১২/১৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। অথচ এ সেতুটি হলে মাত্র ২০ মিনিটে বাসিন্দারা ঢাকায় যেতে পারবে। সেতুটি নিয়ে দু’দফায় টেন্ডারও হয়েছে। সেতুটিকে ঘিরে লাখো মানুষ বুক ভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে আছেন।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়কের বালু নদীর উপর সেতুর নির্মাণের দরপত্র ২০০১সালে আহবান করা হয়। সেতু নির্মাণে মেসার্স ইষ্টার্ণ ট্রেডার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইষ্টার্ণ ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক জাহিদ হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণে ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে মাত্র ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। টাকাও উত্তোলন করা যায়নি। সিডিউল অনুযায়ী সিমেন্ট, রড, বালি, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে নির্মাণ কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। এরকম নানা প্রতিকুলতায় বালু সেতু নির্মাণ কাজ ২১বছরেও শেষ হয়নি। বর্তমানে বালু সেতুর দু’টি পিলার, পিলার কলাম, একদিকের এবার্টমেন্ট ও উইংওয়াল নির্মাণের পর সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে যায়।
২০২১সালে অসমাপ্ত বালু সেতু নির্মাণে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহবান করা হয়। এসময় নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তখন মেসার্স ইউনুস এন্ড বাদ্রার্স এবং মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ (জেভি) সেতু নির্মাণের কাজ পায়। সে অনুযায়ী ২০২১সালের মে মাসে কাজ শুরু করার কথাও ছিলো। অজ্ঞাত কারনে দ্বিতীয় দফায় সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ও দিয়েছিলেন। বালু নদীর রূপগঞ্জ অংশের চনপাড়া, ইউসুফগঞ্জ ও ভোলানাথপুরে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এ সেতুটির ভাগ্যে বইছে বঞ্চনা।
বালু সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠের খিলগাও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস শিল্প। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাঁচপুর, সুলতানা কামাল সেতু ও গাজী সেতুর যানজট কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০/১২ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা,মুড়াপাড়া দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানী রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে।
নগরপাড়া গ্রামের রাসেল আহম্মেদ বলেন, বাপ-দাদার কাছে শুনে আসছি, বালু সেতু নির্মাণ হবে। সেতু নির্মাণ হলে রূপগঞ্জের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তারা লাভবান হবে। কিন্তু নানা প্রতিক‚লতায় সেতু নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি।
নগরপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, কত সরকার আইলো-গেলো, আমাগো স্বপ্ন পূরণ অইলো না। বালু সেতু কবে নির্মাণ হবে, তা কেউ বলতেও পারে না।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) শাহানা ফেরদৌস বলেন, কায়েতপাড়া-নগরপাড়া এলাকার বালু নদীর সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। শিগগিরই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।