মানুষ পুণ্যের পথে চলার নিয়ত করলেও অনেক সময় পাপকর্ম হয়েই যায়। অনেক সময় এক পাপ থেকে বাঁচতে গিয়ে অন্য পাপে পা পিছলে পড়ে। কখনো ইচ্ছায় পাপে লিপ্ত হয়; কখনো অনিচ্ছায়। কখনো বুঝতে পারে, কখনো বুঝতে পারে না। তখন একের পর এক পাপে জড়াতেই থাকে। এতে পাপের বোঝা দিন দিন ভারী হতে থাকে। কিছু গুনাহ থাকে অনেক বড় ও ভারী, যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। আর কিছু গুনাহ অবচেতনভাবেই হয়ে যায়। এটাকে আরবিতে বলে সগিরা গুনাহ। গুনাহ কবিরা বা সগিরা যা-ই হোক, এর পরিণাম ভালো নয়। এর কারণে দুনিয়ার জীবনে আসে বিপদ-আপদ, পরকালে ভোগ করতে হবে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি।
গুনাহ হয়ে গেলে দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় তা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। কিন্তু এই পাপের বোঝা কীভাবে হালকা করা যায়, কীভাবে মেটানো যায় তা নিয়ে অনেকেই ভাবি না। অথচ ইচ্ছে করলে পাপগুলো আমরা মিটিয়ে দিতে পারি তৎক্ষণাৎ। সেই পন্থা আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। নেক কাজের মাধ্যমে পাপ মেটানোর কথা বলেছেন তিনি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘তুমি নামাজ কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ’ (সুরা হুদ : ১১৪)।
কতই না সুন্দর পথ। একটি নেক কাজই পারে আমাদের পাপসমূহ মিটিয়ে দিতে। রাসুল (সা.) হজরত আবু যর (রা.)-কে বলেন, ‘হে আবু যর! যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনো পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার পাপ মিটিয়ে দিবে’ (তিরমিজি : হাদিস ১৯৮৭)। এভাবেই পাপের কাফফরা হয় নেক আমল করার মাধ্যমে।
নেক কাজ নানাভাবে করা যেতে পারে। মানুষকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আমরা নেকি অর্জন করতে পারি। চলতে ফিরতে হরহামেশাই যেহেতু গুনাহের আশঙ্কায় থাকি, সর্বদাই গুনাহের জালে আবদ্ধ থাকি। তাই আমাদের সালাম একটি নেক কাজ। পথে বের হলেই আমরা পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তির মুখোমুখি হই। শুধু ছোট্ট করে একটি সালাম দিলেই হলো। দশটি নেকি আমাদের আমলনামায় জমা হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গুনাহের বোঝাও হালকা হলো। পাশাপাশি পরস্পর ভ্রাতৃত্ব আর মহব্বতের সেতুবন্ধও তৈরি হবে।
দান-সদকার মাধ্যমে নেক কাজ করতে পারি। অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে করতে পারি। সর্বদা সত্য কথা বলার মাধ্যমে করতে পারি। সুযোগ হলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কারো কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে ওজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন’ (মুসনাদে আহমাদ : ২)।
এভাবেই আমরা খুঁজে খুঁজে নেক কাজ করতে থাকলে আমাদের দ্বারা যদি কোনো গুনাহ হয়েও যায়-সেই নেক কাজগুলো গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেয়ামতের দিন যখন আমলনামা পাল্লায় তোলা হবে, আশা করা যায় আমাদের নেক আমলগুলো ছাড়িয়ে গুনাহের পাল্লা কিছুতেই ভারী হয়ে উঠতে পারবে না। এই ছোট ছোট নেক কাজগুলোই সেদিন পাহাড়সম হয়ে আমাদের নাজাতের উছিলা হবে।