Tnntv24.শফিকুল আলম ভূইয়া রূপগঞ্জঃ
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় রাজউকের পূর্বাচল উপশহরের জলসিঁড়ি,ইছাপুরা, গুতিয়াবো, পানিআগ্রা, পশি, আলমপুর, ধামছি, কামতা, হঠাৎমার্কেট, সুলপিনা ও বাঘবের সিডিমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এ সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও পরিবহন চালকদের। সড়কের মাঝখানে থাকা বড় বড় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশাসহ ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন। কিন্তু বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো মানুষ।
সড়কের সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে আবেদন-নিবেদন করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খুবই ঝুঁকির মধ্যে স্কুল-কলেজে আসা যাওয়া করছে। অভ্যন্তরীণ সড়কের মধ্যে জলসিঁড়ি চৌরাস্তা থেকে বাঘবের সিডিমার্কেট গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কয়েকটি বাজারের লোকজন আসা যাওয়া করে। কিন্তু বেহাল অবস্থার কারণে এ সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাও দায়। খানাখন্দে ভরা সড়কের ওপরে দেয়া ইট, সুরকি, ইটের আধলায় উল্টে যায় রিকশা, ভ্যানের মতো ছোট যানবাহন।
সড়কের সৃষ্ট গর্তে পানি জমে ও অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিং উঠে মানুষ ও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সড়কটি দুই বছর ধরে কার্পেটিং উঠে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ জায়গার কার্পেটিং উঠে খোয়া সরে গেছে। সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে অনেক জায়গায় বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বেহাল রান্তার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এখানকার যানবাহন। এছাড়া সড়কে একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ মোড় থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। দ্রুত এ সড়ক সংস্কার না হলে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভাঙা রাস্তার ওপর মোটরসাইলের চাকা উঠলেই তা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাঘবের গ্রামের অটোরিকশা চালক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। রাস্তার কারণে গাড়ির পেছনে যত টাকা খরচ হয়, তাতে আমাদের পরিবার নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাঘবের আইডিয়াল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ও পানিআগ্রা গ্রামের বাসিন্দা সিথি রাণী দাস জানায়, বাড়ি থেকে তার বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এজন্য হেঁটে সে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু ভাঙা রাস্তায় অবিরাম যানবাহন চলাচলের কারণে শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি আর বৃষ্টির সময় কাঁদার সৃষ্টি হয়ে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বেহাল রাস্তার কারণে প্রায়ই ফুটপাটে বিভিন্ন যানবাহন তুলে দেন চালকরা। এজন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে।
পানিআগ্রা গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা আক্তার বলেন, সারা বছর সড়কটিগুলোর এমন বেহালদশা থাকে যে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই সবাই আঁতকে উঠে। বর্ষায় সড়কের স্থানে স্থানে সৃষ্ট গর্তে পানি জমে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি। সব মিলে বেহাল সড়কের কারণে আমাদের ভোগান্তি চরম মাত্রায় উঠেছে। যদি রাস্তা দ্রæত সংস্কার করা না হয়, তাহলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচলে অবৈধ ড্রাম ট্রাক ও ভারি যানবাহন চলা চলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। মটর সাইকেল, ইজিবাইক ও অন্য ছোট বড় যান বাহনগুলো চলছে হেলে দুলে।
স্কুল পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হলে এই একমাত্র সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। এই সড়কটি ব্যবহার করতে গিয়ে ড্রেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাঁটা চলা করা যায় না। পানির নিচে থাকা গর্তে চাকা পড়ে রিকশা উল্টে যাচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে সবাইকে।
দক্ষিণবাগ গ্রামের ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, এই সড়কে রিকসা যেতে চায় না। আর গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে থাকে। তাতে সময় ও খরচ বেশি হচ্ছে। ভাঙ্গা সড়কের ঝাঁকুনি, আর বৃষ্টি পানির কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ড, আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, পূর্বাচলের অভ্যন্তরীণ সড়কের সংস্কার কাজের জন্য প্রস্তুতি চলছে। পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এতদিন বেহাল সড়ক সংস্কার করা যায়নি। শিগগিরই এ সড়কগুলো সংস্কার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।