Tnntv24. নাফিজ আশরাফ:
ত্বকী হত্যার বিচার হবে কি ? এমন প্রশ্ন এখন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী কিশোর ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তে উঠে আসে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নাম।
এরপর তৎকালীন সরকার প্রধানের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তদন্ত সংস্থা র্যাব। তারপর আদালতের কাছে ৭০ বার সময় চেয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি র্যাব। এমন অভিযোগ এনেছেন, সন্ত্রাস দমন ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে সাত মামলার আসামী হয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ দুর্বৃত্তরা নির্মম ভাবে হত্যা করে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। এর একদিন পরই বের হয় ত্বকীর ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল। ফলাফলে দেখা যায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী পদার্থ বিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ নম্বর পেয়েছে। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। আর সেই পরীক্ষায় বিশ্বে প্রথম স্থান ছিল ত্বকীর।
নিহতের বাবা রফিউর রাব্বি বলেন,ত্বকীকে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে নিয়ে ১১ জন মিলে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তারপর ত্বকীর মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে নিয়ে ফেলে দেয়। হত্যার দুই দিন পর ৮ মার্চ ত্বকীর লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যার তীরে কুমুদীনি ওয়েল ফেয়ারের পাশে। তখন অজ্ঞাত আসামী করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করার কয়েক দিন পর আসামীদের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, শামীম ওসমানের নির্দেশে তাঁর ভাতিজা আজমেরী ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমানসহ আরো কয়েকজন ত্বকী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
সন্ত্রাস দমন ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি আরো বলেন, সে সময়ে র্যাব খুবই আন্তরিক ভাবে ত্বকী হত্যার তদন্তের কাজ করে। র্যাবের সে সময় যারা কর্মকর্তা ছিলেন, তারা সুলতান শওকত ভ্রমরসহ দুই আসামীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি নেয়। র্যাব নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশন নামে অফিসের টর্চার সেলে অভিযান চালায়। সেখান থেকে রক্তমাখা জিন্স পেন্ট ও দুটি লাঠিসহ হত্যাকান্ডের আলামত উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দিতে বলেন, আমি আজমেরী ওসমানের অফিস ওইনার ফ্যাশনে যাই বিকেলে। তারপর রাজীব ও কামাল ত্বকীকে আজমেরীর রুমে নিয়ে যায়। আজমেরী ওসমান কালামকে বলেন, সব শেষ। তোরা যেখানে পারিস লাশটা ফেলে আয়। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া তিন জনকে গ্রেফতার করে তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন র্যাব ১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম। আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে অভিযান চালানোর পরই সেই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি দাবি করেন, শামীম ওসমান বলছিল, জাহাঙ্গীর বিএনপি করে এই জন্য আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। রফিউর রাব্বি বলেন, আমি দাবি জানাই শামীম ওসমান, আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমান এদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
র্যাব ১১ র কর্মকর্তা লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। শুধু র্যাব-১১ নয়, র্যাব হেড কোয়াটারও এতদন্তে সহায়তা করছেন। তারা আশা করছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্বকী হত্যা মালার তদন্ত রিপোর্ট রিপোর্ট দিতে পারবেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে প্রতিদিনের মত নগরীর শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত সুধীজন পাঠাগারে উদ্দেশ্যে রওনা হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পাঠাগারের সামনে থেকে কয়েক জন দুর্বৃত্ত তাকে অপহরণ করে সায়েম প্লাজা মার্কেটের তৃতীয় তলায় ওসমান পরিবারের সেনাপতি শাহ্ নিজামের অফিসে নিয়ে যায় ত্বকীকে। বলা হয়ে থাকে এই হত্যা কান্ডের মাস্টারমাইন্ড ওসমান পরিবারের সেনাপতি শাহ্ নিজাম। সেখানে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানসহ আরো কয়েক জন দুর্বৃত্ত ত্বকীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। তারপর রাত ৯ টায় মুমূর্ষু অবস্থায় ত্বকীকে নেয়া হয় নগরীর আল্লামা রোড সরকারি তোলারাম কলেজের পেছনে শামীম ওসমানের ভাতিজা বড় ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল ওইনার ফ্যাশনে। তখন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান আজমেরী ওসমানকে বলে; ভাইয়্যা নেও তোমার জন্য নিয়ে এলাম। বাকীটা তোমার কাজ। তুমি শেষ করো। ওই টর্চার সেলে ত্বকীর ওপর শুরু হয় দ্বিতীয়বার অমানবিক নির্যাতন। সেখানেই ত্বকীকে হত্যা করা হয়।